দেশজুড়ে চলছে ওয়াজ মাহফিল ও ইসলামী মহাসম্মেলন। পাড়া,মহল্লা, গ্রাম ইউনিয়ন, উপজেলা জেলা,বিভাগীয় কিংবা রাজধানী, বাজার পরিচালনা কমিটি কিংবা সংগঠন, মসজিদ কিংবা মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে বিরামহীন ওয়াজ মাহফিল।
সেই মাহফিল গুলোতে হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম, কওমী মাদ্রাসার মুহতামিম, মুহাদ্দিস, কিংবা যাদেরকে আল্লাহতায়ালা বয়ান করার যোগ্যতা দান করেছেন সেই মহান ব্যক্তিবর্গ রাত দিন পরিশ্রম করে মানুষদের হেদায়েতের দিকে আহবান করে যাচ্ছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দিচ্ছেন ইসলামের সু-মহান বাণী। ইসলামের এই ক্রান্তিলগ্নে মাহফিল গুলোতে সাধারণ মুসলমানদের উপস্থিতি ই প্রমাণ করে এদেশে ইসলামের শিকড় কতটা গভীরে।এ-ই মাহফিল গুলোতে সাধারণ মুসলমানদের উপস্থিতি ইসলামী শক্তির একটা প্রতিচ্ছবি। মাহফিল গুলোতে সাধারণত তিন ধরনের মানুষ সম্পর্কিত। (১) আয়োজক কিংবা সাহায্যকারী(২) বক্তা বা ওয়ায়েজ(৩) শ্রোতা। মূলত এই তিন ধরনের মানুষগণের ই অক্লান্ত পরিশ্রমে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ওয়াজ মাহফিল। ওয়াজ মাহফিল কোনো অনুষ্ঠান নয়, বরং তা বড় একটি এবাদত। ইসলামের প্রত্যেকটা অনুষ্ঠান ই এবাদতে পরিগনিত হয় যদি সে-ই অনুষ্ঠান গুলো করা হয় একমাত্র আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য। পাশাপাশি এখলাস যদি তার মধ্যে থাকে তাহলে তা হয়ে যায় আল্লাহর দরবারে মকবুল ও গ্রহণযোগ্য। ইসলামের একটি অনু সঙ্গ যদি এখলাসের সাথে পালন করা হয় তাহলে তা উম্মতের জন্য হেদায়েতের আলোকবর্তিকা হয়ে যায়। ওয়াজ মাহফিল গুলোতে মানুষদের সীমাহীন উপস্থিতি ইসলামের দুশমনদের ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। মানুষকে কিভাবে ওয়াজ মাহফিল থেকে দূরে সরানো যায়, কিভাবে ওয়াজ মাহফিল গুলোকে বিতর্কিত করে মানুষের মনে ওয়াজ মাহফিল সম্পর্কে ঘৃণা সৃষ্টি করা যায় ইসলামের দুশমনরা এখন সে বিষয়ে কলকাঠি নাড়তে শুরু করেছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তারা ওয়াজ মাহফিলের মৌলিক নীতিমালা থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়ে কিছু বক্তাকে এমন ভাবে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে যাদের আচরণে মানুষ ওয়াজ মাহফিল সম্পর্কে বিরুপ ধারণা পোষণ করা শুরু হয়েছে। কাউকে গানের স্বর কিংবা চুক্তিভিত্তিক ওয়াজ মাহফিলের বক্তা হিসেবে ও নামিয়ে দিয়েছে। যাদের কারণে আজ হক্কানি উলামাদের মূল্যায়ন কমে যাচ্ছে মাহফিল গুলোতে। যাদের কথায় ইসলাহ হবে জাতীর সেই ব্যক্তিদের আজ এক পর্যায়ে কোনঠাসা করে যারা ওয়াজকে বানিজ্যিক করে ফেলেছে কিংবা বিভিন্ন অঙ্গী ভঙ্গী করে ওয়াজ মাহফিলের পবিত্রতা বিনষ্ট করছে তাদের দৌরাত্ম্যের কারণে আজ হক্কানি আলেম উলামারা প্রায় অসহায়।
কিন্তু এখন সময় এসেছে এ বিষয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ করা।এই নিয়ন্ত্রণ সরকার কিংবা প্রশাসনিক নয়। এ নিয়ন্ত্রণ হতে হবে শীর্ষ উলামায়ে কেরামদের নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি। যেখানেই ওয়াজ মাহফিল হোকনা কেন, সেই মাহফিলে কে বয়ান করবে,বক্তার কোয়ালিটি কোন ধরণের হতে হবে তা ও নির্ধারণ করা এখন সময়ের অন্যতম দাবীতে পরিনত হয়েছে।
মানুষ যেন বক্তার বক্তৃতা থেকে ইসলামের অপব্যাখ্যা শুনে বিভ্রান্ত না হয়ে পড়ে সেজন্য ই এ বিষয়ে কওমী ঘরানার শীর্ষ উলামায়ে কেরামদের মধ্য থেকে একটি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম বা কমিশন গঠন করা অপরিহার্য হয়ে দাড়িয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে না করা গেলেও অন্তত আঞ্চলিক ভাবে এ বিষয়ে হক্কানি উলামাদের এগিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ আঞ্চলিক ভাবে ও যেখানে মাহফিল হবে সেই মাহফিলের বক্তা সম্পর্কে স্থানীয় সর্বোচ্চ মাদ্রাসা থেকে সনদ কিংবা আইডেন্টিটি নিলে উম্মত গোমরাহি থেকে বেচে যাবে।এবিষয়ে এখনি যদি উলামাদের নিয়ন্ত্রণ না থাকে তাহলে সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন সাধারণ মুসলমান বিভ্রান্তিতে জড়িয়ে না পড়বে। এখনি যদি এ বিষয়ে উলামাদের নজরদারি বৃদ্ধি না করে তাহলে উম্মত অনেকাংশে ই বিভ্রন্তিতে জড়িয়ে পড়বে। আর তখন ইসলামের দুশমনদের টার্গেট ই বাস্তবায়ন হয়ে যাবে।তাই আসুন, ওয়াজের মতো একটি মহৎএবাদতকে সহীহ ধারায় পরিচালিত করে উম্মতের ইসলাহ ও দ্বীনের দাওয়াতের কার্যক্রম অব্যাহত রাখি।
লেখকঃ মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসানযুগ্ম সম্পাদক – ইসলমামী ঐক্যজোট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা।
Leave a Reply